ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট বলতো ,”সুভাষ একটা রোগ। একটা সংক্রমণ,যা অচিরেই আটকানো দরকার।” আমরা বলি, সুভাষ একটা আধ্যাত্মবোধ। যাঁর সুভাষে – সুভাষের অন্তর্ধানের ৬২ বছর পরেও সুভাষিত হচ্ছে হাজারো রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক মস্তিষ্ক । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যপারে আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো অনর্গল বলে লিখে বা ভেবে কাটিয়ে দিতে পারবেন ঘন্টার পর ঘন্টা। হয়তো উঠে আসবে ২৩ শে জানুয়ারি ১৮৯৭। ১৮ অগাস্ট ১৯৪৫- এর মত তারিখ । উঠে আসবে জানকীনাথ বসু, প্রভাবতী দেবী, এমিলি বা অনিতা দেবীর নাম। মানচিত্রে হয়তো দেখিয়ে দেবেন কটক,ভবানীপুর, আফগানিস্তান ,জার্মানি, কোহিমা বা তাইওয়ানকে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় যে, সুভাষ কে? সুভাষ কি? সুভাষ কেন? নিজের মতো করে উত্তর দিই, –
১) সুভাষ কে? : সুভাষ একটা গন্ধ,যা বারুদের থেকে তীব্র,অ্যামোনিয়ার থেকে ঝাঁঝালো আর কস্তুরীর চেয়ে মিঠে। এই মিঠে সুভাষ গায়ে মেখে স্বাধীনতার প্রথম পতাকার সাক্ষী কোহিমা আজও অপেক্ষা করে সুভাষের। এই গন্ধের ঝাঁঝ সীমান্তে ঘুম ভাঙ্গায় শত্রু পক্ষের। এই গন্ধে বারুদের তীব্রতা ফুসফুসে মিশিয়ে পথে নামে সহস্র যুবক-যুবতী । কখনও রিজওয়ানুরের জন্য । কখনও বা নির্ভয়ার জন্য। সুভাষ সে, যে চোখে চোখ রেখে বলে, স্বাধীনতা চেয়ে পাওয়া যায় না। স্বাধীনতা অধিকার। স্বাধীনতা বিপ্লব। যে বিপ্লব, আজও প্রতিনিয়ত প্লাবিত হয় তোমার আমার রক্তে। শুধু সেই ধ্বনিটা দরকার যে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতার আশ্বাস দেয় । শুরুতেই বলেছি, সুভাষ একটা গন্ধ । একটা বোধ । তাই হয়তো সুভাষকে ধরা যায় না। সুভাষ স্বাধীন থাকে আমরণ।
২) সুভাষ কি? : সুভাষ আমাদের সমাজের সবকটা স্তম্ভের ভিতরে থাকা সেই লোহার শিকের কাঠামো, যাতে মরচে ধরানো যায় কিন্তু উপরে ফেলা যায় না। ২৬ শে জানুয়ারি কুচকাওয়াজ দেখতে দেখতে অবচেতন মনেই যখন কপালে হাত উঠে যায় ,মনে রাখবেন ওখানে সুভাষ ছিল। ৫০ হাজারের স্টেডিয়ামে মহেন্দ্র সিং ধোনিকে বিশ্বকাপ নিয়ে দৌড়তে দেখে যখন আপনার চোখ দিয়ে জল পড়েছিল, সেদিনও সুভাষ ছিল। কনকনে শীতে মোহন যখন মোহাম্মদকে সঙ্গী করে ভোররাতে সুফিয়ার নিহারি খেতে গেছিলেন, সেদিনও সুভাষ ছিল। আক্রম হয়তো জানে না, অষ্টমীর রাতে সুভাষ সারারাত আড্ডা মেরেছিলো ওদের সাথে ম্যাডক্স স্কোয়ারে । “সুভাষ কী, তা আমরা বারবার না বুঝেও তার প্রমান দিই। সোশ্যাল মিডিয়াতে ১০০ টাকার নোটে নেতাজির ছবির দাবি যতবার শেয়ার হয়েছে, ততবার বুঝেছি “সুভাষ কী “।
৩) সুভাষ কেন? : বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। সুভাষ তাই আসলে একটা বিশ্বাস। যে বিশ্বাস রোজ একটা গোটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির দিকে। একটা বিশ্বাস। যে বিশ্বাস আস্থা রাখে, একদিন অন্যায় বন্ধ হবে। সকলে সমান অধিকারে সুস্থভাবে বাঁচবে। আগেও বলেছি সুভাষ তাই রক্তে প্লাবিত হয়। ব্রিটিশ গভর্নমেন্ট যতই সুভাষকে রোগ বলুক, সুভাষ তো আসলে রক্তের সেই উষ্ণ অনুভূতি যা, শরীরকে রোগমুক্তি করে। সমাজে যখনই কোনও অধিকার-সম্পন্ন ক্ষমতাশীল মানুষকে ঘুষ খেতে দেখেছেন, রক্ত টগবগ করে ফোটানোর জন্য সুভাষ। যতবার টিকিট না কেটে মনে ভয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, তার কারণ সুভাষ। যতবার আপনার জীবদ্দশায় বিবেকের কাছে আপনাকে মাথা নত করতে হবে অথবা রাতে শোওয়ার আগে আয়নায় মাথা তুলে দাঁড়াবেন, তার কারণ হবে সুভাষ।
সবকিছুর ‘কম্প্রোমাইস’- এর দেশে অধিকারবোধ তো আসলে সুভাষেরই দান। তাই তো পাড়ার আড্ডায়, চায়ের ঠেকে, মদের আসরে বা বিজ্ঞদের আলোচনায় মাঝেমাঝেই আমরা বলি -“নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মত করে স্বাধীনতা পেলে দেশটা হয়তো অন্যরকম হতো।
No comments:
Post a Comment