নির্ভয়া কাণ্ডের এই অপরাধীদের প্রতি আজ সারা দেশের ঘৃণা বর্ষিত হচ্ছে। হওয়াই উচিত।
তাই আজ এদের এই অবস্থা দেখে কারো মনেই কোন সিম্প্যাথী আসবে না। অনেকেই ভাববে ওরা নাটক করছে, মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অভিনয় করছে ফাঁসি এড়ানোর জন্য। কিন্তু আমি জানি তা নয়। ওরা কেন দেওয়ালে মাথা ঠুকছে আমি জানি।
ওরা মাথা ঠুকছে এই আক্ষেপে যে, কেন আমরা হিন্দু ঘরে জন্ম নিয়েছি। তারা ভাবছে, আমরা হিন্দু না হয়ে যদি মুসলমানের ঘরে জন্ম নিতাম তাহলে তো আজ আমাদের ফাঁসি হত না। আমরা বহাল তবিয়তে স্বাধীন ভাবে বাইরে ঘুরতে পারতাম, ঠিক যেমনভাবে আজ মহম্মদ আফরোজ ঘুরছে। আফরোজ তো ওই একই অপরাধের সঙ্গী ছিল। এবং এই কজন ধর্ষণকারীর মধ্যে সে-ই ছিল সবথেকে নৃশংস, নিষ্ঠুর। নির্ভয়া-র যোনির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তার অন্ত্রগুলো সে-ই টেনে বের করে নির্ভয়ার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। সে আজ মুক্ত বিহঙ্গ। আর এরা ফাঁসির অপেক্ষায়।
মহম্মদ আফরোজ কী করে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল সে কাহিনী অনেকেই জানে। যারা জানে না তারা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। তার উকিল কোর্টে দাবী করেছিল যে সে নাবালক। সেই দাবীর সমর্থনে আফরোজ এর উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক মুসলিম গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টার এর সার্টিফিকেট কোর্টে পেশ করেছিলেন আফরোজের উকিল। ম্যাজিস্ট্রেট সেই প্রধান শিক্ষক কে কোর্টে এসে সাক্ষী দিতে আদেশ দিয়েছিলেন। সেই প্রধানশিক্ষক স্কুলের একটি ভর্তি রেজিস্টার এর উল্লেখ করে আফরোজের একটি জন্ম তারিখ বলেছিলেন। সেই তারিখ অনুসারে অপরাধের সময় আফরোজ এর বয়স ১৮ বছরের থেকে একটু কম। ম্যাজিস্ট্রেট প্রধান শিক্ষক কে প্রশ্ন করলেন যে, ওই জন্মতারিখের সমর্থনে কোন ডকুমেন্ট আছে কিনা। প্রধান শিক্ষক উত্তর দিলেন যে, ওটা অজ পারাগ্রাম। ওখানকার রীতি অনুসারে বাচ্চার অভিভাবক এসে যে জন্মতারিখ বলে সেটাই স্কুলের খাতায় লিখে নেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ওই উত্তরেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। এবং মহম্মদ আফরোজ কে নাবালক হিসাবে ধরে নিয়ে আমাদের দেশের জুভেনাইল অ্যাক্ট অনুসারে সরকারী হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হল। খেল খতম। মহম্মদ আফরোজ মুক্ত।
প্রশ্ন হচ্ছে, নির্ভয়া কান্ড নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল, ওই রেপিস্টদের নৃশংসতায় মানুষের ঘৃণা এক জন আন্দোলনের রূপ নিয়েছে, তখন ওই মহামান্য ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় একটু ভাবলেন না যে আইনের ফাঁক গলে এখন নৃশংস ঘৃণ্য অপরাধী গলে বেরিয়ে যেতে পারে! ওই মহম্মদ আফরোজ এর বোন ম্যারো টেস্ট করে ওর সঠিক বয়স নির্ধারণ করা যেত না? করা উচিত ছিল না?
এই তো কিছুদিন আগে এর থেকে অনেক হালকা একটা কেসে দেখলাম ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধীর বয়স নির্ধারণের জন্য ওই আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু নির্ভয়া কাণ্ডে সেই আদেশ দেওয়া হল না। কারণ ও যে মহম্মদ! ও যে বিনয় নয়। ও যে আফরোজ! ও যে অক্ষয় নয়। তাই প্রসিকিউশন অর্থাৎ সরকারী উকিলও ওর সঠিক বয়স নির্ধারণের জন্য বোন ম্যারো টেস্ট এর দাবী তুললেন না।
তাই আজ তিহার জেলে অক্ষয়, বিনয়, মুকেশ আর পবন জেলের দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়াল রক্তাক্ত করে দিচ্ছে - ওদের পরিণতি আর ওদের সাগরেদ মহম্মদ আফরোজের অন্য পরিণতির কথা ভেবে। নিজেদের হিন্দু ধর্মে জন্মগ্রহণের দুর্ভাগ্যের কথা ভেবে।
পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ
22nd February 2020