Monday, 21 February 2022

নির্ভয়া কাণ্ড


নির্ভয়া কাণ্ডের এই অপরাধীদের প্রতি আজ সারা দেশের ঘৃণা বর্ষিত হচ্ছে। হওয়াই উচিত। 


তাই আজ এদের এই অবস্থা দেখে কারো মনেই কোন সিম্প্যাথী আসবে না। অনেকেই ভাববে ওরা নাটক করছে, মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অভিনয় করছে ফাঁসি এড়ানোর জন্য। কিন্তু আমি জানি তা নয়। ওরা কেন দেওয়ালে মাথা ঠুকছে আমি জানি। 


ওরা মাথা ঠুকছে এই আক্ষেপে যে, কেন আমরা হিন্দু ঘরে জন্ম নিয়েছি। তারা ভাবছে, আমরা হিন্দু না হয়ে যদি মুসলমানের ঘরে জন্ম নিতাম তাহলে তো আজ আমাদের ফাঁসি হত না। আমরা বহাল তবিয়তে স্বাধীন ভাবে বাইরে ঘুরতে পারতাম, ঠিক যেমনভাবে আজ মহম্মদ আফরোজ ঘুরছে। আফরোজ তো ওই একই অপরাধের সঙ্গী ছিল। এবং এই কজন ধর্ষণকারীর মধ্যে সে-ই ছিল সবথেকে নৃশংস, নিষ্ঠুর। নির্ভয়া-র যোনির মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তার অন্ত্রগুলো সে-ই টেনে বের করে নির্ভয়ার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। সে আজ মুক্ত বিহঙ্গ। আর এরা ফাঁসির অপেক্ষায়। 


মহম্মদ আফরোজ কী করে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল সে কাহিনী অনেকেই জানে। যারা জানে না তারা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। তার উকিল কোর্টে দাবী করেছিল যে সে নাবালক। সেই দাবীর সমর্থনে আফরোজ এর উত্তর প্রদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক মুসলিম গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টার এর সার্টিফিকেট কোর্টে পেশ করেছিলেন আফরোজের উকিল। ম্যাজিস্ট্রেট সেই প্রধান শিক্ষক কে কোর্টে এসে সাক্ষী দিতে আদেশ দিয়েছিলেন। সেই প্রধানশিক্ষক স্কুলের একটি ভর্তি রেজিস্টার এর উল্লেখ করে আফরোজের একটি জন্ম তারিখ বলেছিলেন। সেই তারিখ অনুসারে অপরাধের সময় আফরোজ এর বয়স ১৮ বছরের থেকে একটু কম। ম্যাজিস্ট্রেট প্রধান শিক্ষক কে প্রশ্ন করলেন যে, ওই জন্মতারিখের সমর্থনে কোন ডকুমেন্ট আছে কিনা। প্রধান শিক্ষক উত্তর দিলেন যে, ওটা অজ পারাগ্রাম। ওখানকার রীতি অনুসারে বাচ্চার অভিভাবক এসে যে জন্মতারিখ বলে সেটাই স্কুলের খাতায় লিখে নেওয়া হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ওই উত্তরেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। এবং মহম্মদ আফরোজ কে নাবালক হিসাবে ধরে নিয়ে আমাদের দেশের জুভেনাইল অ্যাক্ট অনুসারে সরকারী হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হল। খেল খতম। মহম্মদ আফরোজ মুক্ত।


প্রশ্ন হচ্ছে, নির্ভয়া কান্ড নিয়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল, ওই রেপিস্টদের নৃশংসতায় মানুষের ঘৃণা এক জন আন্দোলনের রূপ নিয়েছে, তখন ওই মহামান্য ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় একটু ভাবলেন না যে আইনের ফাঁক গলে এখন নৃশংস ঘৃণ্য অপরাধী গলে বেরিয়ে যেতে পারে! ওই মহম্মদ আফরোজ এর বোন ম্যারো টেস্ট করে ওর সঠিক বয়স নির্ধারণ করা যেত না? করা উচিত ছিল না?


 এই তো কিছুদিন আগে এর থেকে অনেক হালকা একটা কেসে দেখলাম ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধীর বয়স নির্ধারণের জন্য ওই আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু নির্ভয়া কাণ্ডে সেই আদেশ দেওয়া হল না। কারণ ও যে মহম্মদ! ও যে বিনয় নয়। ও যে আফরোজ! ও যে অক্ষয় নয়। তাই প্রসিকিউশন অর্থাৎ সরকারী উকিলও ওর সঠিক বয়স নির্ধারণের জন্য বোন ম্যারো টেস্ট এর দাবী তুললেন না।


তাই আজ তিহার জেলে অক্ষয়, বিনয়, মুকেশ আর পবন জেলের দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়াল রক্তাক্ত করে দিচ্ছে - ওদের পরিণতি আর ওদের সাগরেদ মহম্মদ আফরোজের অন্য পরিণতির কথা ভেবে। নিজেদের হিন্দু ধর্মে জন্মগ্রহণের দুর্ভাগ্যের কথা ভেবে।


পথপ্রদর্শক মাননীয় তপন ঘোষ

22nd February 2020

Tuesday, 15 February 2022

লুইজান আল হাথলাউল

 


লুইজান আল হাথলাউল, সৌদি আরবের 

শরিয়তি ইসলামি আইনে নারীদের উপর অকথ্য অত্যাচারের কথা 
সমগ্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন। কুপ্রথার প্রাচীর ভেঙে 
চালিয়েছেন গাড়ি, ছেড়েছেন হিজাব, গড়ে তুলেছেন গণ আন্দোলন।


এরজন্য অত্যাচার কম হয়নি লুইজানের উপরে। ১০০০ দিনের 
কারাবাস হয়েছে, সেখানে জেলকর্মীরা তাকে লাগাতার ধর্ষণ 
করেছে। পুরুষ বন্দীদের মাঝে বসিয়ে দেখানো হয়েছে পর্ণোগ্রাফি, 
সিলিং থেকে ঝুলিয়ে মারা হয়েছে তাকে। তবে এত যন্ত্রণা দিয়েও 
রোখা যায়নি তাঁকে, তাঁর লড়াইকে। 

সম্প্রতি কারাবাস থেকে মুক্তি পেলেন তিনি। সমগ্র বিশ্বের কোটি 
কোটি নারীদের আদর্শ মানবীরূপী এই দেবীকে আমার অন্তরের 
প্রণাম।

বাংলাদেশে দুর্ঘটনা সাজিয়ে হত্যা

 দীপক সুশীল বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছিলো একটা মন্দির করার জন্য। বাড়িতে ১০ বছর ধরে দুর্গা পুজা করত তার বাবা। মন্দির তৈরী করতে ইট সিমেন্ট কেনার পর বাড়িতে এসে হামলা চালায় ৪০-৫০ জনের শান্তি বাহিনী । হুমকি দেয় মন্দির বানানোর চেষ্টা করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এই হুমকিতে ভয় পেয়ে স্ট্রোক হয়ে  মারা যান বাবা সুরেশ চন্দ্র। তার শ্রাদ্ধ করে ফিরে আসার সময় একটি নম্বরপ্লেটহীন পিকআপ ভ্যান পরিকল্পিতভাবে সুরেশ চন্দ্রের ৫ পুত্র ও এক কন্যাকে পিষে দিয়ে হত্যা করে ফেলে। এটি রোড এক্সিডেন্ট নয়, রাস্তার থেকে দুই হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলিকে পিকআপ ভ্যানটি পিষেই শুধু মেরেনি, একজনকে আহত মনে করে ফিরে এসে ফের পিষে দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে। 


এতবড় ধর্মীয় ম্যাসাকার ঘটে গেছে মানবতাবাদীদের কোন সাড়াশব্দ নেই! কারণ যাদের উপর ম্যাসাকার হয়েছে তাদের মাথায় হিজাব ছিলো না। মুখেও ছিলো না সুন্নতী দাড়ি। নামগুলোও আরবী নয়। মিডিয়াও তাই ভাইরাল করেনি। বিবিসি আনন্দবাজারের মত কাগজগুলি যদি ঘটনাটি উল্টো হতো, মসজিদ বানানোর উদ্যোগ নেয়ায় পরিবারের ৫ জনকে হত্যা করা হযেছে- তাহলে তাদের কভারেজে জাতিসংঘের মহাসচিবকে পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে হতো। বাংলাদেশের কাগজগুলি সুরেশ চন্দ্রে বাড়িতে হামলাকারীদের পরিচয় দিয়েছে ‘দুর্বৃত্ত’। এরাই সরস্বতী পুজার আগে দেশজুড়ে মূর্তি ভেঙ্গেছে। এরাই গদা ইকবালকে দিয়ে কুরআন মন্দিরে রেখে সারাদেশে হামলা চালিয়েছে। এরাই শ্লোগান দেয় নারায়ে তাকবির আল্লা আকবর। তবু এদের নাম কিছুতে ‘মুসলমান’ বলা যাবে না!


মুসকানের মাথায় কাপড় থাকাটা পৃথিবীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু পাকিস্তানে আর নতুন করে কোন মন্দির গুরু দুয়ার না বানানোর উপর বিল পাশ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতে ব্লাক আউট। সুরেশ চন্দ্রের পরিবারের উপর এতবড় ধর্মীয় ম্যাসাকার দুদিনেই চাপা পড়ে যাবে কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের লিবারাল রাজনীতিতে হিজাবের বাজার আছে সুশীল চন্দ্রের নেই। বাংলাদেশে যদি মন্দির তৈরি হবে আর মূর্তি পুজাই হবে তাহলে কি বা ল ফেলতে দেশ স্বাধীন করছিলাম...। লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ীই যে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছিলো সুশীল চন্দ্রদের প্রতি এই রকম ম্যাসাকার ঘটার পরও ফেইসবুকের কবি মানবতাবাদীদের নিরবতাই বুঝিয়ে দেয়।