Saturday, 12 March 2022

TheKashmirFiles


TheKashmirFiles


আজকের লাঞ্চে কী খাবেন শুনি? 


ধরুন, বেগুনভাজা। গরম গরম ডাঁটিওয়ালা বেগুনভাজা। ডাঁটি তুলে গরম ভাতের সঙ্গে মেখে সবে মুখে গ্রাস তুলতে যাবেন , এমন সময় - 


পাশের বাড়িতে মহা হৈচৈ, গোলমাল। "ধুরর শালা, কার বাবার বিয়ে লেগেছে!"- কাঁচা খিস্তি ছুঁড়ে আপনি বেরিয়ে এসে দেখলেন- 


আপনার পাশের বাড়ির মিত্তিরবাবুর ষোড়শী কন্যাকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে একদল হায়েনা। 


নিষিদ্ধ মাস অনেক কষ্ট করে ধৈর্য ধরে থাকার পরে আজ মুক্তকচ্ছ হয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে মেয়েটির ওপরে, বিনুনি দুলিয়ে যে মেয়েটিকে আপনি রোজ সকালে স্কুলে যেতে দেখতেন খিলখিলিয়ে উড়ন্ত প্রজাপতির মতো, তার মুখ চোখ নাক যোনিদ্বার খুবলে খুবলে খাচ্ছে তারা। চোখেমুখে লালসা, পরিতৃপ্তির মিশেল।  চেটে চেটে তারা স্বাদ আস্বাদন করছে, 


যেভাবে আপনি একটু আগে টেস্ট করছিলেন, বেগুনভাজা। 


কয়েক হায়েনা মহোল্লাসে চিৎকার করছে 


"আসি গাছি পাকিস্তান, বাটা রোস টা বাতানেভ সান" 


"আমরা কাশ্মীর চাই , কাশ্মীরি হিন্দুদের মেয়েদের চাই, তাদের না মর্দ পুরুষদের চাই না!"


আপনি ভয় পেয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।পাশের ঘরে সাউন্ড সিস্টেম অন করে চালিয়ে দিলেন , " ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না আ আ ...!" 


- কী আলফাল বকছেন মশাই? 


- আলফাল নয় স্যার। এভাবেই ধর্ষিতা হয়েছিল ল্যাব অ্যাসিস্ট‍্যান্ট গিরিজা টিক্কু  , নার্স সরলা ভাট, ধর্ষিতা হয়েছিল আরও অনেকেই। কাশ্মীরি পন্ডিত গৃহিণীদের টেস্ট কীরকম , তা চাখতে চাখতে আজাদির মহোৎসব পালন করছিল কাশ্মিরীয়তের ধ্বজাধারীরা! 


- বাকি ভারত, প্রশাসন, ভারত রাষ্ট্র কী করছিল? 


- তারা চুপ ছিল। নীরব। তারা লাইভ দেখছিল, কেউ মুখ ঘুরিয়ে খাচ্ছিল বেগুনভাজা। গরম গরম বেগুনভাজা।


এবার স্বাদ পাল্টান। চিকেন কারি। 


গাছপাঁঠা খেয়ে আপনার মুখে অরুচি ধরেছে। তাই স্বাদ পাল্টাতে ঠিক করলেন ,বাড়িতেই রান্না করবেন চিকেন কারি। 


গেলেন কসাইয়ের বাড়ি। দেখলেন কসাই খুব ব্যস্ত। কেন? 


গত রাতে তারা গুলি চালিয়ে সাফ করে দিয়েছে পাশের চ্যাটার্জি বাবুর গোটা পরিবারকে।  এখন মৃতদেহগুলো টিপে টিপে তারা পরীক্ষা করে দেখছে, কেউ বেঁচে আছে কিনা! 


"মাংসটা টাটকা তো?!" 


- " একদম হাতে গরম। বেশি বকলে হোম ডেলিভারি করে দেওয়া হবে। " 


কসাইয়ের রক্তচক্ষু দেখে কথা না বাড়িয়ে আপনি চুপচাপ চিকেনের প্যাকেট নিয়ে হাঁটা দিলেন বাড়ির দিকে। ফেরার পথে চোখে পড়লো, পরিবারটির লোন সারভাইভার, দশ বছরের বিট্টু, থামের আড়ালে লুকিয়ে কেমন যেন কঠিন দৃষ্টিতে আপনার দিকে তাকিয়ে।


আপনি ভাবতে লাগলেন , এমন ফার্স্ট ক্লাস চিকেন রাঁধলাম, টেস্ট লাগছে না কেন? 


- কী বলে যাচ্ছেন তখন থেকে মশাই? 


- আজ্ঞে যা তা নয়! বিনোদ ধার। ১৯৯৮ সালের ২৫ শে জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন, এভাবেই তার পরিবারের ২৩ জনকে গুলি করে সাফ করে দিয়েছিল সাচ্চা কাশ্মীরিরা ,যাদের অনেকেই ছিল বিনোদেরই প্রতিবেশী।। 


শেষকৃত‍্যের সময় কয়েকজন প্রতিবেশি হাত লাগাতে এলে বিনোদ ধার হিসহিস করে বলেছিল, 


"ছোঁবে না ওদের!" 


-হুমম। 


- বেগুনভাজা হলো। চিকেন কারি হলো। এবার একটু স্বাদ বদলান। 


রসমালাই। সুস্বাদু মিষ্টি রসমালাই। 


অফিস ফেরত আপনি চেটেপুটে খাচ্ছেন রসমালাই। আপনার চোখে পড়লো, পাশের বাড়ির বুড়ি মাসিমাকে একদল লোক চেপে ধরে কী যেন খাওয়াতে চেষ্টা করছে কিন্তু মাসিমা কিছুতেই খাচ্ছেন না। 


কেন? 


মুখ বাড়িয়ে দেখলেন খাদ্যবস্তুটি বড়ই উপাদেয়। মাসিমার বড় ছেলেকে থেঁতলে খুন করা হয়েছে একটু আগে, মেঝেতে পড়ে আছে তাঁর রক্ত মাখা ঘিলু। সেই রক্ত ভাতে মেখে উল্লাস করে , মাসিমাকে খাওয়াতে চাইছে আজাদির যোদ্ধারা, অর্ধচেতন মাসিমা , এত সুস্বাদু খাবারের স্বাদ বুঝতে না পেরে মাথা নাড়িয়েই যাচ্ছেন। 


- হরর ফিকশন লিখছেন নাকি মশাই? 


- আজ্ঞে না। এটাই হয়েছিল। 


২২ শে মার্চ ১৯৯০, টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার বি.কে গাঞ্জু কারফিউ থামার পর যখন বাড়ি ফিরছিলেন পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য তখন তাকে ফলো করা শুরু করে জেহাদিরা, যেই মুহুর্তে তিনি বাড়িতে এসে পৌছোন, সন্ত্রাসীরা দরজা ভেঙে সেখানে প্রবেশ করে। প্রাণে বাঁচতে গাঞ্জু বাড়ির তেতলায় উঠে এক চালের পাত্রের ভেতর গিয়ে লুকোন। তার প্রতিবেশি সাচ্চা কাশ্মীরিরাই তাকে সন্ত্রাসীদের হাতে ধরিয়ে দেয় । 


তারপরে কাহিনী খুব সোজা। গুলি করে খুন করার পরে তার রক্ত দিয়ে চাল মেখে তার স্ত্রী কে জোর করে খাওয়ানো হয়। 


বাকি ভারত নিশ্চুপ । তারা চেটেপুটে খাচ্ছিল, রসমালাই।


কয়েক হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা। ললিতাদিত্যের কাশ্মীর, রাণী দিদ্দার কাশ্মীর, যার নামটাই এসেছে মহর্ষি কাশ্যপের নাম থেকে, সেই কাশ্মীর যেখানে লেখা হয়েছিল পঞ্চতন্ত্র। সেখানেই ওয়ান ফাইন মর্নিং কাশ্মীরি পন্ডিতরা দেখতে পেলো, তাদের বাড়িতে পোস্টার, 


"রালিভ গালিভ ইয়া চালিভ" 


অর্থ -  "ধর্মান্তরিত হও , নয়তো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও, অথবা কাশ্মীর ত্যাগ করো"


জেনোসাইড চললো। কয়েক লাখ কাশ্মীরি পন্ডিত উদ্বাস্তু হলেন, মেয়েরা ধর্ষিতা হলো। খুন জখম লুঠপাট চললো, 


কাশ্মীরকে আজাদ করার মহোৎসব-


ক্লাস স্ট্রাগল দিয়ে জেনোসাইড ব্যাখা করা পেটোয়া বুদ্ধিজীবীরা বারবার এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান, যে ক্লাস স্ট্রাগলে ধর্মান্তরিত করার ,ধর্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে কেন?!!


- এই অন্যায়ের দায় কার? 


- ধুসস এ আবার অন্যায় নাকি! কী যেন বলেন! মানবতার সিলেবাস সিলেক্টিভ। হিন্দু মেয়ে তার হিন্দু পরিচয়ের জন্য ধর্ষিতা হলে, হিন্দু পরিচয়ের জন্য হিন্দু মেয়েকে খেয়ে পিকনিক হলে,  হিন্দু পুরুষ তার হিন্দু পরিচয়ের জন্য খুন হলে, সেসব দেখতে নেই ,জানতে নেই, বলতে নেই। 


মাথার উপর ভগবান না থাকলেও মার্ক্স লেনিন আরও অনেকে আছেন, তারা পাপ দেবেন। 


- আপনি বিদ্রুপ করছেন। বুঝলাম! 


- না ঘেন্না করছি। প্রাণপণে ঘেন্না করছি আপনাদের সিস্টেমকে , এই ইকোসিস্টেমকে , এই প্রশাসনকে , আপনাদের এই সুশীলতাকে, আঁতলামিকে। শেষ দিন অব্দি ঘেন্না করতে চাই। 


আর তাই- 


তাই এই সিনেমাটা দেখে এলাম বুইলেন। সিনেমাটায় ঝিঙ্কু নাচ নেই, ফরেন লোকেশন নেই,বড় বড় বাজার গরম গরম করা ডায়লগ নেই- 


আছে কিছু সত্যি ঘটনা। একটি নিঃশব্দ জেনোসাইডের। একপাক্ষিক সিলেক্টিভ সেক্যুলারিজমের। নির্লজ্জতার। 


আপনিও দেখতে আসতে পারেন। অথবা না গিয়ে বাড়িতে বসে খেতেই পারেন, বেগুনভাজা, চিকেন কারি, রসমালাই..! 


"আমার আসল চেহারা কি চিনতে তুমি পারো?

চিনতে যদি পেরেই থাকো, ঘেন্না করো ঘেন্না করো।" 


     ✍ -  চ য় ন    মু খা র্জি


#TheKashmirFiles 


১৯৪৬ - '৪৭ এর বাংলার ঐতিহাসিক পটভূমিকে নিয়ে এরকম একটি সত্যনিষ্ঠ ছবি করার কথা কেউ ভাববেন না ?!!

কেউ নেই  ???


"টুটে হুয়ে লোগ বাতাতে নেহি,

উসে শুনা যাতা হ্যায় !"

Thursday, 3 March 2022

মঙ্গলগ্রহে আটকে পড়লেও ফিরিয়ে আনবে

মঙ্গলগ্রহে আটকে পড়লেও ফিরিয়ে আনবে.. 



যা বুঝলাম আমি আসলে ভারত বলে এই দেশটা নিয়ে যাতা রকম obsessed! আমরা obsessed। হবো না কেন বলুন তো? দেশকে আমরা মাতৃভূমি বলি কিন্তু একটা কাঁটাতার দিয়ে নির্ধারিত দেশ যদি রক্ত মাংসের একটা মানুষ, আটপৌরে মায়ের মতোই ব্যবহার করে, তার রাষ্ট্রনীতি ঠিক করে সন্তানদের কথা ভেবে দেশটাকে নিয়ে পাগলামি করব না?

L

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসন্ন। দেশগুলি পক্ষ নিচ্ছে, অস্ত্র দিচ্ছে, যুদ্ধ যুদ্ধ করছে। এমন একটা সময় যখন বাকি দেশগুলো নিজেদের নাগরিকদের তড়িঘড়ি ইউক্রেন ছেড়ে চলে আসার নিদান দিয়েই দায় সারছে, ভারত যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নিজের ছেলেমেয়েদের ঘরে ঘরে ফিরিয়ে আনছে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের পর বৈঠক করছে যুদ্ধে জড়িত দুই দেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে অনুরোধ করছে, যাতে ঘরের ছেলেমেয়েগুলোকে সেফ প্যাসেজ দেওয়া হয়। যুদ্ধ কিছুটা সময় অন্তত বন্ধ রাখা যায়। যাতে ভারতীয়রা ফিরে আসার সুযোগটুকু পায়। রাশিয়া সত্যিই সেফ প্যাসেজ দিল। যুদ্ধ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখলো। ভারতীয়রা বেরিয়ে আসুক। ভারতের ১৩০কোটি মানুষের দাবি। সরকারের দাবি। পক্ষ পরে নেওয়া যাবে, আগে ঘরের ছেলেমেয়েরা ফিরুক। 


ভারতীয় বায়ুসেনা নিজের গ্লোবমাস্টার বিমান নিয়ে  পৌঁছে গেছে ছেলেমেয়েগুলোকে ফিরিয়ে আনতে। কোন রিস্ক নিচ্ছে না সরকার। যদি মিসাইল হামলা হয় অসামরিক বিমানে। যদি গুলি করে নামানোর চেষ্টা করে কেউ? তারচেয়ে সেনাবাহনীর বিমানে নিরাপদে ফিরুক সন্তানেরা। মায়েরা তো এভাবেই নিজের বাবাই আর সোনাইদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার আর স্বচ্ছন্ডের কথা ভাবে। দেশ বোধহয় আসলে মায়ের মতোই ভালো। 


ওদিকে সমস্ত ছুটি বাতিল করে বিদেশ মন্ত্রকের কর্মচারীরা মহাযুদ্ধে ঘরে ফেরানোর মহাযজ্ঞ শুরু করেছে। যাদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, তারা কিন্তু কেউ দেশের হয়ে, দেশের কাজে ইউক্রেন যায়নি। ব্যক্তিগত স্তরে স্বেচ্ছায় বিদেশে গেছিল। কিন্তু সুষমা স্বরাজের ওই বিখ্যাত উক্তি আছে না, এক ছাত্র বিদেশে পাসপোর্ট টাকা-পয়সার সব হারিয়ে ফেলেছিল। পাগল পাগল অবস্থা। তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে টুইট করেছিলেন ঘরে ফিরিয়ে আনার আকুতি নিয়ে। ভারতীয় সেই ছেলেটিকে আশ্বস্ত করে সুষমা স্বরাজের একটি উক্তি ছিল। "চিন্তা করো না তুমি ভারতীয় তুমি মঙ্গল গ্রহে আটকে পড়লেও ভারত সরকার তোমাকে তোমার দেশে ফিরিয়ে আনবে।"


হয়তো ঠিক এই কারণেই পাকিস্তানের ছাত্রছাত্রীরা পর্যন্ত ভারতের পতাকা হাতে ইউক্রেন থেকে সেফ প্যাসেজ দিয়ে ফিরে আসছেন। হয়তো ঠিক এই কারণেই বারবার ১৩০ কোটি মানুষ গেয়ে ওঠে, "ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ।ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি।আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।"


©----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ